Download Screen Reader

স্মার্ট বাংলাদেশ : আইসিটি মাস্টারপ্ল্যান ২০৪১

Date: 23 February, 2023

Writer : Dr. Dewan Muhammad Humayun Kabir
Source : Daily Ittefaq

Reading Time: 1 Minute

23 February, 2023
Writer : Dr. Dewan Muhammad Humayun Kabir
·
Source : Daily Ittefaq
· Reading Time: 1 Minute

স্মার্ট বাংলাদেশ : আইসিটি মাস্টারপ্ল্যান ২০৪১

স্মার্ট বাংলাদেশ : আইসিটি মাস্টারপ্ল্যান ২০৪১

ডা. বার্নাড লন বলেছেন, ‘যিনি অদৃশ্যকে দেখতে পারেন তিনিই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অদৃশ্যকে দেখতে পেরেছেন বলেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ আজ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এ রূপান্তরিত হয়েছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের এক যুগের অভিযাত্রায় তথ্যপ্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবন, নাগরিক সেবা এবং সরকারি-বেসরকারি খাতের সমৃদ্ধিসহ বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করেছে অবিস্মরণীয় বিপ্লব—যা এটুআই প্রকাশিত ‘আমার ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং ‘দি এটুআই জার্নি’ শীর্ষক বই দুইটিতে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় বাস্তবায়ন করা হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’—প্রধানমন্ত্রী সর্বপ্রথম এ ঘোষণা দেন গত বছর এপ্রিলে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে গঠিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’-এর ৩য় সভায়। পরবর্তীকালে গেল বছর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে তিনি ঘোষণা দেন—২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের। অর্থাৎ আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী বাংলাদেশ যার স্তম্ভ হবে চারটি (১) স্মার্ট সিটিজেন; (২) স্মার্ট গভর্নমেন্ট; (৩) স্মার্ট ইকোনমি এবং (৪) স্মার্ট সোসাইটি।

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বলতে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার গড়ে তোলাকে বুঝানো হয়েছে। যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রম স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তর, সরকারি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং উন্নয়নে দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণসহ সরকারি বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করা হবে।

এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে গত বছর প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ৩০ সদস্যবিশিষ্ট ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে ২৩ সদস্যবিশিষ্ট ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটি’ গঠন ও এসব কমিটির কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে এটুআইসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর/ সংস্থা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করেছে। এটুআই দেশি-বিদেশি বিভিন্ন অংশীজনের সহায়তায় ‘স্মার্ট ভিলেজ’, ‘স্মার্ট সিটি’ এবং ‘স্মার্ট অফিস’ কনসেপ্টের পাইলটিং শুরু করেছে। যথার্থ জ্ঞান, দক্ষতা এবং যোগ্যতাসম্পন্ন সিভিল সার্ভিস গড়ে তুলতে এটুআই পরিচালনা করছে ‘সিভিল সার্ভিস ২০৪১ : ডিজিটাল লিডারশিপ জার্নি’।

একটি সময়োপযোগী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে ‘জাতীয় ব্লেন্ডেড শিক্ষা ও দক্ষতাবিষয়ক মহাপরিকল্পনা’-এর খসড়া প্রণয়নে ব্লেন্ডেড শিক্ষাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সকে কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে এটুআই। এটুআইয়ের সহযোগিতায় বিচারিক ব্যবস্থাকে সহজ করতে চালু হয়েছে অনলাইন কজলিস্ট, জুডিশিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড এবং আমার আদালত (মাইকোর্ট) অ্যাপ যা আগামীর স্মার্ট বিচারিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

পাশাপাশি স্মার্ট ইকোনমি গড়ে তুলতে দেশব্যাপী ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে প্রবাসী হেল্প ডেস্ক চালু, সরকারের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রম ত্বরান্বিতকরণে ডিজিটাল সেন্টারের নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে ‘সাথী’ নেটওয়ার্ক সৃষ্টি, দেশের সব পরিষেবা বিল প্রদানের পদ্ধতি সহজীকরণে সমন্বিত পেমেন্ট প্ল্যাটফরম ‘একপে’-তে আটটি আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের নতুন পেমেন্ট চ্যানেল যুক্ত করা হয়েছে।

স্মার্ট গভর্মেন্ট বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ডিজিটাল সেন্টারভিত্তিক ওয়ানস্টপ সেবাকেন্দ্র এবং প্রকল্পের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে পিপিএস ও আরএমএস সফটওয়্যার এবং অনলাইন রিপোর্ট ম্যানেজমেন্ট (আরএমএস) সিস্টেম চালু করা হয়েছে।

বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তিতে অগ্রগামী দেশগুলোর উত্তম পদক্ষেপগুলো যাচাই করে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : আইসিটি মাস্টারপ্ল্যান ২০৪১’ তৈরি করা হয়েছে যার মূল কথা হচ্ছে, আগামী দিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, ইন্টারনেট অব থিংসের (আইওটি), রোবটিকস, ব্লকচেইন, ন্যানো টেকনোলজি, থ্রি-ডি প্রিন্টিংয়ের মতো আধুনিক ও নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানি, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বাণিজ্য, পরিবহন, পরিবেশ, শক্তি ও সম্পদ, অবকাঠামো, অর্থনীতি, বাণিজ্য, গভর্ন্যান্স, আর্থিক লেনদেন, সাপ্লাই চেইন, নিরাপত্তা, এন্ট্রাপ্রেনিয়রশিপ, কমিউনিটিসহ নানা খাত অধিকতর দক্ষতার দ্বারা পরিচালনা করা হবে। এই আইসিটি মাস্টারপ্ল্যানে মোট ৪০টি মেগাপ্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে যেসব কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম লক্ষ্য ২০৪১ সাল নাগাদ জাতীয় অর্থনীতিতে আইসিটি খাতের অবদান অন্তত ২০ শতাংশ নিশ্চিত করা। ৪র্থ শিল্পবিপ্লব ও স্মার্ট বাংলাদেশবান্ধব পরিকল্পনা, নীতি ও কৌশল গ্রহণে ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্যোগগুলোকে স্মার্ট বাংলাদেশের উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বিত করা হচ্ছে।

পরিশেষে, বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এ রূপান্তর করার লক্ষ্যে ৪র্থ শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে যদি ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তা হলে লক্ষ্য পূরণ সম্ভব। ২০১৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার ‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’ স্লোগানকে আমরা এভাবেই ব্যক্ত করতে পারি : ‘তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাব, স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ গড়ব’। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট ইকোনমি এবং স্মার্ট সোসাইটি—এই চারটি মূল ভিত্তির ওপর নির্ভর করে আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব বলে আমরা আশাবাদী।

লেখক : প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব), এটুআই প্রোগ্রাম, মন্ত্রিপরিষদ ও আইসিটি বিভাগ

  • চমৎকার ধারনা,ধন্যবাদ বর্তমান সরকারকে।স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

  • Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *


    RELATED POSTS