26 November, 2020
How Bangladesh is seizing the opportunities of e-governance
As more services are delivered online by the private sector, governments must follow suit and...
রংপুরের হরিদেব ইউনিয়নের মেঠোপথ। দু’পাশে মাঠের প্রায় পুরোটাজুড়ে সোনালি ধানের ক্ষেত। পাকা ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক। পড়ন্ত বিকেলে সোনালি সূর্যরশ্নি যেন ছুঁয়ে যাচ্ছে সোনারঙা ধানের শীষ। এতটাই সংকীর্ণ পথ যে, গাড়িতে বসে যাওয়ার জো নেই। ঘরেফেরা গরু, কিষানি, আর পাকা ধানের সঙ্গে আমরা কতিপয় সাংবাদিক ধুলো মেখে হেঁটে চলেছি সেই মেঠোপথে। গন্তব্য হরিদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদ। আধাঘণ্টার মতো হাঁটার পরই মূল রাস্তায় উঠে ফের গাড়িতে করে পৌঁছে যাই ইউনিয়ন পরিষদে। পরিষদের সুবিন্যস্ত কক্ষে ডিজিটাল সেবার পসরা সাজিয়ে বসেছেন উদ্যোক্তা লাভলী রানী।
সন্ধ্যার পর কাজ শেষ করে স্থানীয় খোরশেদ আলী (৫৫) এসেছেন জমির পরচা নিতে, সালেহা বেগম এসেছেন তাঁর সদ্যোজাত সন্তানের জন্মনিবন্ধন করাতে। লাভলী রানীর কক্ষটিতে রয়েছে কয়েকটি কম্পিউটার, প্রিন্টার ও ইন্টারনেট সুবিধা। মাত্র কয়েকটি ডিভাইস নিয়ে তিনি তিন শতাধিক ডিজিটাল সেবা দিচ্ছেন স্থানীয়দের। মূলত লাভলী রানী একজন নারী উদ্যোক্তা। তিনি হরিদেবপুর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিচালনা করছেন। প্রতিদিন নিজের স্কুটি চালিয়ে কর্মস্থলে আসেন তিনি। তাঁর সহ-উদ্যোক্তা রয়েছেন মোখলেছুর রহমান। দু’জন মিলেমিশে রকমারি ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিচ্ছেন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের পাশাপাশি শহরে রয়েছে তাঁর কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর নানা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিংসহ ডিজিটাল সেন্টারের বিভিন্ন সেবাও দিচ্ছেন তিনি এ কেন্দ্র থেকে। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সহজে তথ্যপ্রযুক্তির নানা সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকারের সফল উদ্যোগ ডিজিটাল সেন্টার। ‘জনগণের দোরগোড়ায় ডিজিটাল সেবা’ স্লোগানে ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র (বর্তমানে ডিজিটাল সেন্টার-ইউডিসি) উদ্বোধন করেন। যাত্রা শুরুর এক যুগ পেরিয়ে ডিজিটাল সেন্টার হয়ে উঠেছে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।
ডিজিটাল সেন্টারের তদারককারী সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) এখন আইসিটি বিভাগের আওতায় বর্তমানে এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রাম নামে পরিচালিত হচ্ছে। এটুআই সূত্র জানিয়েছে, ৪০টি সেবা নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ডিজিটাল সেন্টার থেকে ৩৫০টিরও বেশি সরকারি-বেসরকারি সেবা পাওয়া যাচ্ছে। ডিজিটাল সেন্টারে সরকারি সেবাপ্রাপ্তির মধ্যে রয়েছে জমির পরচা, জীবন বীমা, পল্লী বিদ্যুতের বিল পরিশোধ, সরকারি ফরম, অনলাইন জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ভিজিএফ-ভিজিডি তালিকা, নাগরিক সনদ, স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রভৃতি। অন্যদিকে ভিসা আবেদন ও ট্র্যাকিং, টেলিমেডিসন, মোবাইল ব্যাংকিং, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ব্রিটিশ কাউন্সিলের ইংরেজি শিক্ষার মতো বেসরকারি সেবাও পাওয়া যাচ্ছে।
প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, দেশজুড়ে বর্তমানে ৮৪৬৮টি ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার ছাড়াও পৌর ডিজিটাল সেন্টার (পিডিসি) এবং নগর ডিজিটাল সেন্টার (সিডিসি) রয়েছে। এসব সেন্টার থেকে নাগরিকদের প্রয়োজনীয় ডিজিটাল সেবা দিতে কাজ করছেন প্রায় ১৬ হাজার ১৭০ জন উদ্যোক্তা; যাঁদের অর্ধেকই নারী।
সম্প্রতি আমরা একদল সাংবাদিক ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিভিন্ন কার্যক্রম সরেজমিন দেখতে রংপুর ছাড়াও সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটের বিভিন্ন ডিজিটাল সেন্টার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করি। এর মধ্যে যেমন রয়েছে লালমনিরহাটের সীমান্তঘেঁষা বুড়িমারী ডিজিটাল সেন্টার তেমনি গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদের কোলঘেঁষা কামারজানি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌরসভা ডিজিটাল সেন্টার, রামদৌলতপুর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। মূলত এসব ডিজিটাল সেন্টারের হাত ধরে শহরের সেবা পৌঁছে গেছে গ্রামীণ জীবনে। আর মানুষের একেবারে দোরগোড়ায় ডিজিটাল সেবা পৌঁছে সত্যিকার অর্থেই ডিজিটাল সেবার স্পর্শে বদলে গেছে প্রান্তিক জীবন।
কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই সব শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বল্প খরচে পাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি সব সেবা। গাইবান্ধার কামারজানি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে দেখা হলো ৮৫ বছরের জয়গুন বেওয়ার সঙ্গে। তিনি দেবরের সঙ্গে এসেছেন জমি-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে। বয়স এবং ঝামেলার কথা চিন্তা করে গাইবান্ধা শহরে গিয়ে জমির সমস্যা সমাধানের চেষ্টাই করেননি তিনি। কিন্তু নিজের গ্রামে ডিজিটাল সেন্টারে সেবাটি পাওয়া যাওয়ায় অনায়াসে আসতে পেরেছেন। একই রকমভাবে রংপুর, সিরাজগঞ্জ ও লালমনিরহাটের ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে দেখা হয় বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে, যাঁরা ডিজিটাল সেন্টারে এসেছেন নানা সেবা নিতে। কারও প্রয়োজন জন্মনিবন্ধন সনদ, কারও জমিজমা-সংক্রান্ত কাগজপত্র কিংবা হালনাগাদ সনদ, কেউ এসেছেন এজেন্ট ব্যাংকিং সুবিধা নিতে। হাসিমুখে সব ধরনের সেবা দিচ্ছেন এসব উদ্যোক্তা।
ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাস করা শাহজাদপুর পৌরসভা ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা হয়েছেন নুরুল আলম আনছারী। এমন একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে তিনি ফিরে গেছেন নিজ জেলায়, চাকরি না করে উদ্যোক্তা হয়ে তিনি আরও কয়েকজনের কর্মসংস্থান করেছেন। এর মধ্যে একজন স্থানীয় কলেজে অনার্স পড়ূয়া শিক্ষার্থী নির্জনা ইয়াসমিন সুস্মিতা। সুস্মিতা পড়াশোনার পাশাপাশি ডিজিটাল সেন্টারে চাকরি করে নিজের খরচ চালাচ্ছেন, পরিবারকেও সহায়তা করছেন।
গাইবান্ধার কামারজানি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা মাহাবুবুর রহমান জানালেন, কামারজানি বাজারে যাঁরা কম্পিউটারনির্ভর সেবা প্রদানে দোকান খুলেছেন তাঁদের অধিকাংশই তাঁর ডিজিটাল সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। একদিকে গ্রামীণ জনগণ নিজের ইউনিয়নে বসেই জেলা অফিসের বিভিন্ন সেবা পাচ্ছেন, উদ্যোক্তারা স্বনির্ভর হয়ে সংসারের হাল ধরছেন, তেমনি তরুণ প্রজন্ম এখান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কেউ উদ্যোক্তা হচ্ছেন কিংবা কেউ চাকরির বাজারে ঢুকছেন। এটুআই প্রকল্প পরিচালক দেওয়ান মুহম্মাদ হুমায়ূন কবীর সমকালকে বলেন, ডিজিটাল সেন্টার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ডিজিটাল হাব হিসেবে কাজ করছে।
26 November, 2020
As more services are delivered online by the private sector, governments must follow suit and...
12 March, 2023
What was a dream on March 7, 1971—Independent Bangladesh—became a reality on December 16, 1971....
6 March, 2022
A youth of the country's south western district Khulna has turned into an entrepreneur utilizing...