Download Screen Reader

বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে উদ্ভাবনী এগ্রিকালচার সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট

4 September, 2022

Reading Time: 1 Minute

করোনাকালীন সময়ে বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত সর্বোত্তম অনুশীলন এবং উদ্ভাবনী ডিজিটাল এগ্রিকালচার সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জাতিসংঘের হাই-লেভেল পলিটিক্যাল ফোরাম অন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (এইচএলপিএফ) ২০২২-এর একটি উচ্চ-পর্যায়ের অনলাইন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বক্তারা এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। অনলাইনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে তৈরি একটি টেকসই এগ্রিকালচারাল ইকোসিস্টেম খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাপনা এবং এর সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতের জন্য আরও অনেক সুবিধা বয়ে আনবে। তাঁরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ক্রাউডসোর্সিং, স্যাটেলাইট ডাটা এবং এগ্রিকালচার সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট’সহ বিভিন্ন ডিজিটাল ডাটা সিস্টেম ব্যবহার করে একটি সার্বজনীন ফুড ডাটা সিস্টেম উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের সরকার, উন্নয়ন অংশীদার, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিগণ অংশ নেন এবং তাদের উদ্ভাবিত সর্বোত্তম প্রযুক্তি, দক্ষতা এবং অনুশীলন নিয়ে আলোচনা করেন। 

 

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সকলের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সহজ নীতিমালা তৈরি ও তা কার্যকর করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সরকারের মধ্যে ক্রস-সেক্টরাল কোঅর্ডিনেশন এবং কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য একটি টেকসই লজিস্টিক সলিউশন ফ্রেমওয়ার্ক তৈরিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তাঁরা। ব্লকচেইনের মতো সর্বাধুনিক ফোরআইআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে করোনাকালীন জরুরি পরিস্থিতিতে উদ্ভাবিত ডিজিটাল প্রযুক্তিগত সমাধানগুলোর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আরও বৃহৎ পরিসরের জন্য টেকসই এগ্রিকালচার সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে রূপান্তর করা যেতে পারে বলে মত দেন বক্তারা। 

 

অনুষ্ঠানে দেওয়া স্বাগত বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব জনাব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে আমাদের অনেক দেশে কৃষিই হলো প্রধান অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি। তবে, মহামারির সময়টাতে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন অব্যাহত রাখতে অনেকগুলো ডিজিটাল উদ্ভাবনকে দৈনন্দিন জীবনের অংশ হিসেবে কাজে লাগাতে হয়েছে। বৈশ্বিক ক্ষুধা মোকাবেলায়ও আমরা এই উদ্ভাবনগুলোকে কাজে লাগাতে পারি। সেইসাথে গ্রামীণ এবং প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে থাকা কৃষিতে জড়িত সংস্থাগুলোকে বিশ্ব বাজারের সাথে যুক্ত করার জন্য একটি শক্তিশালী সাপ্লাই চেইন দরকার হবে। তিনি জানান, গত এক দশকে কৃষি গবেষণা, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং, চাষাবাদ, প্রতিকূল জলবায়ু মোকাবেলা এবং কৃষি খাতের টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। ডিজিটাল পদ্ধতির উপর ভর করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। মহামারি পরবর্তী সময়ে আমরা কৃষক, কৃষিপণ্যের ক্রেতা, সরবরাহকারী এবং সমগ্র সাপ্লাই চেইন এর উন্নয়ন প্রক্রিয়ার এইসব নতুন ধারণা ও সেবাকে টেকসই করার লক্ষ্যে কাজ করছি। বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা এখন অন্যান্য দেশের সাথে আমাদের এই প্রযুক্তি, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতাগুলো শেয়ার করতে পারি। 

 

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজার জনাব আনীর চৌধুরী। সাউথ-সাউথ নেটওয়ার্ক ফর পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন (এসএসএনফরপিএসআই) এর উপদেষ্টা তাঁর উপস্থাপনায় কোভিড-১৯ চলাকালীন খাদ্য ও অন্যান্য শিল্পের জন্য বাংলাদেশে নেওয়া বিভিন্ন উদ্ভাবনী উদ্যোগ সম্পর্কে আলোকপাত করেন। বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ক্রাউডসোর্সিং, স্যাটেলাইট ডাটা এবং এগ্রিকালচার সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট এর জন্য বিভিন্ন ডিজিটাল ডাটা ব্যবহার করে একটি ফুড ডাটা সিস্টেম তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি। এগ্রিকালচার সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট এর সাথে জড়িত বিভিন্ন অংশীজনের মধ্যে সহযোগিতামূলক উদ্যোগ নেওয়ার উপরও জোর দেন এবং কোভিড-১৯ জরুরি পরিস্থিতিতে নেওয়া বিভিন্ন উদ্ভাবনী উদ্যোগের টেকসই প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে এগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার এবং বৃহত্তর সুবিধার জন্য বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। 

 

সমাপনী বক্তব্যে সেনেগালে নিযুক্ত জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি চ্যাখ নিয়াং এবং ইউনাইটেড নেশন্স অফিস ফর সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন (ইউএনিএসএসসি) এর ডেপুটি ডিরেক্টর ফর প্রোগ্রাম অ্যান্ড অপারেশনস মিস জিয়াওজুন গ্রেস ওয়াং মহামারি পরবর্তী সময়ে বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এগ্রিকালচার সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট এর লক্ষ্যে একটি সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের উপর জোর দিয়েছেন।

 

অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে ‘ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেসন অব এগ্রিকালচার সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট টু এনশিউর ফুড সিকিউরিটি ইন দ্য নিউ নরমাল’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনারও আয়োজন করা হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) জনাব মাসুদ বিন মোমেন এর উপস্থাপনায় উক্ত প্যানেল আলোচনায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অনুবিভাগ) ড. খন্দকার আজিজুল ইসলাম; উগান্ডার এগ্রো সাপ্লাই লিমিটেড-এর নির্বাহী পরিচালক জনাব জোসেফ ওগোয়াল; বেয়ার্স ক্রপসায়েন্স লিমিটেডের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স, সায়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি, সাউথ এশিয়া-এর পরিচালক জনাব রাজবীর রাঠি; গ্লোবাল ইনোভেশন ফান্ড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব অবিনাশ মিশ্রা; জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন; এবং কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট কৃষি ও মৎস্য বাণিজ্য নীতির উপদেষ্টা ড. বেঞ্জামিন কোয়াসি অ্যাডোম প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এসময় প্যানেলিস্টরা তাদের নিজেদের দেশের সেরা উদ্ভাবন ও অনুশীলনগুলো নিয়ে আলোচনা করেন এবং পারস্পরিক সুবিধার জন্য প্রয়োজনে এগুলোকে কীভাবে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে মতামত প্রদান করেন।

 

অন্যান্যদের মধ্যে, জাতিসংঘের সদস্যভূক্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক সংস্থা, বেসরকারি খাত এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা এই অনলাইন অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছিলেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন, জাতিসংঘে সেনেগাল প্রজাতন্ত্রের স্থায়ী মিশন, ইউনাইটেড নেশন্স অফিস ফর সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন (ইউএনিএসএসসি), জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং সাউথ-সাউথ নেটওয়ার্ক ফর পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন (এসএসএন৪পিএসআই) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এতে সহযোগিতা করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), দ্য কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট, গ্লোবাল ইনোভেশন ফান্ড, এগ্রো সাপ্লাই লিমিটেড, বায়ার ক্রপসায়েন্স লিমিটেড এবং পাবলিক ডিজিটাল।