কোরবানি ঈদে ক্রেতাদের আগ্রহ কমছে অনলাইন পশুর হাটে। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছে, করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় এ বছর মানুষ সরাসরি হাটে গিয়ে পশু কিনছে। তাই বিক্রি কমেছে অনলাইন হাটে। তবে সাধারণ ক্রেতারা বলছে, অনলাইনে গরুর মান যাচাই করতে না পারা ও প্রতারণা এড়াতেই আগ্রহ কমছে ক্রেতাদের।
২০২০ সালের ঈদুল আজহার সময় দেশে ডিজিটাল হাট শুরু হয়। তখন জনপ্রিয়তা পাওয়ায় আসন্ন ঈদে কোরবানির পশু বিক্রির জন্য অনলাইনে পশু কেনাবেচার জন্য সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগের এটুআই প্রকল্প, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, একশপ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) ডিজিটাল হাট চালু করেছে।
এ ছাড়া ভালো সাড়া পাওয়ায় এবার কেন্দ্রীয়ভাবে ‘ডিজিটাল পশুহাট’ চালু করেছে সরকার। সরকারের ডিজিটাল হাটের জন্য
https://digitalhaat.gov.bd/ ওয়েবসাইট চালু করেছে আইসিটি বিভাগ। এ ওয়েবসাইটে ‘নিরাপদ থাকাটাই জরুরি এখন, হাটে না গিয়েও হাট যখন-তখন’, ‘এক ক্লিকে হাট থেকে হাতে’, ‘ডিজিটাল হাট থেকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কিনতে পারেন পছন্দের কোরবানির পশু’ এমন স্লোগানে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
এ ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, এরই মধ্যে এতে দেশের বিভিন্ন এলাকার ৬৩টি পশুর খামার যুক্ত হয়েছে। পশুর ক্যাটাগরিতে গরু, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, উট, মহিষ রাখা হয়েছে। ক্রেতাদের যে পশু পছন্দ, ক্যাটাগরিতে ক্লিক করলেই বিস্তারিত তথ্য পাচ্ছেন।
প্রচারণা চালালেও সাড়া মিলছে না অনলাইন হাটে। এ বছর তিন জুলাই উদ্বোধনের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ছয় লাখ ভিজিটর অনলাইন গরুর হাট ভিজিট করেছেন আর বিক্রি হয়েছে ৩১ হাজার ৬৪০টি গরু। এখন পর্যন্ত অনলাইন হাট থেকে মোট বিক্রি হয়েছে ২৭৭ কোটি টাকা।
এটুআই বলছে, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক এখন আর আগের মতো নেই। এ বছর করোনার সংক্রমণও কম থাকায় অনলাইন পশুর হাটে মানুষের আগ্রহ কম ফলে সুযোগ যেখানে আছে, সেখানে খামারে কিংবা হাটে গিয়েই পশু কিনতে চাইছেন ক্রেতারা। তবে গত দুবছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত সাড়া কম পাচ্ছি।
তবে মার্কেটিং প্লাটফর্ম হিসেবে এবার অনলাইন শপগুলো ভালো রেসপন্স দিচ্ছে। ক্রেতারা দেখছে কেমন গরু আছে। নতুন খামারিরা যুক্ত হচ্ছে। বিক্রি কম হলেও বাজার সংযোগের কাজ করছে প্লাটফর্মটি। এটুআই প্রকল্পের পরিচালক ডা. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর সময়ের আলোকে বলেন, গতবার অনলাইনে পৌনে চার লাখ পশু বিক্রি হয়েছে। ১৭ হাজার কোটি টাকার মতো ক্রয় বিক্রি হয়েছে। আর আজকে পর্যন্ত সাত হাজার গরু বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ছয় লাখ মানুষ ডিজিটাল হাটের সাইটে ঢুকে পশু দেখেছে।
তিনি বলেন, গত বারের চেয়ে এবার বেচাকেনা কম হবে। মানুষের ভেতর সবসময়ই কাজ করে যে হাটে যাবে মজা করে গরু কিনবে আর এটাই আনন্দ। গতবার কোভিড বেশি থাকায় বিক্রি বেশি ছিল।
এদিকে কোরবানির জন্য পশু কেনা থেকে শুরু করে সবকিছুই করে দিচ্ছে ডিজিটাল হাট। কিন্তু নানা ধরনের প্রতারণার কারণে দিন দিন ডিজিটাল হাটের প্রতি আগ্রহ কমছে মানুষের। গতবছর ডিজিটাল হাট থেকে গরু কিনে প্রতারিত হয়েছেন খোদ বাণিজ্যমন্ত্রী।
সম্প্রতি ইভ্যালি, কিউকম, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, আলাদিনের চেরাগ ও আলেশা মার্টের মতো চমকপ্রদ অফার নিয়ে আসা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতারণার করাণে বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এসব অনলাইন শপের প্রতারণার বিষয়গুলো বেশি আলোচিত হওয়ায় মানুষের আস্থা আরও কমেছে।
ক্রেতারা বলছেন, অনলাইনে সাধারণত ছবি দেখে গরু বুকিং দেওয়া হয়। আর বুকিং দিলে তাদের টাকা দিয়ে দিতে হয়। শর্ত থাকে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত তারাই লালন-পালন করে দেবেন। সেক্ষেত্রে ঈদের আগের রাতে একজন ক্রেতা গিয়ে যদি ছবিতে দেখা তার গরুটা না পান তা হলে তিনি আর কী করতে পারবেন?
এ ছাড়া গরু ওজন করার ক্ষেত্রেও ফাঁকফোকর রয়েছে। গরুকে বেশি পরিমাণ খাওয়াইয়ে অনেকেই ওজন করে থাকেন। কিছুক্ষণ পর সেই ওজন আর থাকে না। কিন্তু টাকা পরিশোধ করতে হয় অনলাইনে দেখা ওজনেই। আবার অনলাইনে পশু রোগাক্রান্ত কিনা তা যাচাই করার সুযোগ নেই। যদিও পশুর ছবি আপলোড করার সময় স্বাস্থ্য সনদের স্ক্যান কপিও আপলোড করার কথা বলছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তাই কোরবানির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আরামপ্রিয় না হয়ে অনলাইনে হলেও খামারে গিয়ে সরাসরি দেখে পশু কেনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসব প্রতারণার কারণে এ বছর এখনও তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। ডিএনসিসির ডিজিটাল হাটসহ বেসরকারি অনলাইন প্লাটফর্মে কোরবানির পশু বেচাকেনা এখনও জমে ওঠেনি। তবে বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম ছাড়াও ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গরু-ছাগল বিক্রির জন্য নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন খামারিরা। দুয়েকটি গরু যাদের আছে এমন কৃষকও নিজের গরুর ছবি তুলে নিজের ফেসবুক ওয়াল কমিউনিটিভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করছেন।